বিবিসি (যুক্তরাজ্য) সিঙ্গাপুরে গ্লোবালফাউন্ড্রিজ কোম্পানির শাখার মিঃ ট্যান ইউ কংকে উদ্ধৃত করে বলেছে: "আপনি কী চান, কোন নকশা পছন্দ করেন তা আমাদের বলুন এবং আমরা আপনার জন্য এটি তৈরি করব।"
এই মুহুর্তে, গ্লোবালফাউন্ড্রিজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত শুল্ক নীতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য তার ভবিষ্যত পরিকল্পনাগুলি তৈরি করছে।
শুল্ক স্থগিতের সময়সীমা শেষ হতে না হতেই অনেক দেশ ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে আলোচনার জন্য তাড়াহুড়ো করছে। এপ্রিল মাসে, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প বাণিজ্যিক অংশীদারদের উপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছিলেন, কিন্তু আলোচনার সুযোগ দেওয়ার জন্য অনেক দেশের জন্য বাস্তবায়ন 90 দিনের জন্য বিলম্বিত করেছিলেন, যার সময়সীমা 9 জুলাই নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এরপর কী হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
৭ জুলাই (ফ্রান্স) বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে যে রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন যে তিনি অন্যান্য দেশে শুল্ক এবং বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কিত প্রথম চিঠি পাঠানো শুরু করেছেন। মার্কিন নেতা সামাজিক নেটওয়ার্ক ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করেছেন: "আমি আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে বিশ্বের অনেক দেশের সাথে মার্কিন শুল্ক/চুক্তি পত্র ৭ জুলাই (স্থানীয় সময়) সোমবার দুপুর ১২ টা থেকে পাঠানো হবে"।
সেমিকন্ডাক্টরগুলিকে এখনও পর্যন্ত শুল্কমুক্ত রাখা হয়েছে, কিন্তু ট্রাম্প বারবার তাদের উপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এই অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। জুলাইয়ের শুরুতে, ব্লুমবার্গ জানিয়েছে যে হোয়াইট হাউস চীনে প্রযুক্তির চোরাচালান রোধ করার জন্য মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডে চালান সীমিত করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপের উপর নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করার পরিকল্পনা করছে।
তার পক্ষ থেকে, মিঃ ট্যান ইউ কং ভাগ করে নিয়েছেন যে এর ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। গ্লোবালফাউন্ড্রিজ, যেখানে মিঃ ট্যান ইউ কং কাজ করেন, ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া সহ বিশ্বের অনেক জায়গায় কারখানা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সদর দপ্তর গ্লোবালফাউন্ড্রিজ, বিশ্বের বৃহত্তম সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইনার এবং নির্মাতাদের দ্বারা তাদের চিপ তৈরির জন্য চুক্তিবদ্ধ। গ্লোবালফাউন্ড্রিজ সম্প্রতি এআই হার্ডওয়্যারের চাহিদা আকাশচুম্বী হওয়ায় তাদের বিনিয়োগ $16 বিলিয়ন করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। গ্লোবালফাউন্ড্রিজ ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে তাদের চিপ উৎপাদন এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের কিছু অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
অনিশ্চয়তার মধ্যে, এশিয়া জুড়ে কঠোর সরবরাহ শৃঙ্খলের সাথে চলমান চিপমেকার, টেক্সটাইল কোম্পানি এবং অটো যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীরা অর্ডার পূরণ, খরচ কমানো এবং নতুন গ্রাহক খুঁজে বের করার জন্য তাড়াহুড়ো করছে।
"কোম্পানিগুলিকে তাদের নিরাপত্তা মজুদের মাত্রা পুনর্বিবেচনা করতে হবে, অস্থিরতা মোকাবেলা করার জন্য মজুদের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে এবং লিড টাইম বাড়ানো উচিত," বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের অপর্ণা ভরদ্বাজ বলেন। তিনি আরও বলেন, এটি নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে, তবে কিছু দেশে তাদের প্রতিযোগিতামূলকতা এবং বাজারের অংশীদারিত্বের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। অন্য কথায়, অনিশ্চয়তা হল নতুন স্বাভাবিক ।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে শুল্ক আরোপের ফলে টেক্সটাইল, আসবাবপত্র, রাবার এবং প্লাস্টিক সহ অনেক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০২৪ সালের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির বিশ্বব্যাপী জিডিপির ৭.২% অবদান থাকবে। তাই শুল্ক আরোপের খরচ গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এই অঞ্চলে, শুধুমাত্র ভিয়েতনামই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।
এশিয়ায়, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া শুল্ক স্থগিতের সময় বাণিজ্য আলোচনা চালিয়ে গেছে। এবং সময়সীমা যত এগিয়ে আসছে, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প টোকিওকে আরও বেশি শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন - ৩৫% পর্যন্ত। জাপানি গাড়ি নির্মাতারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মাজদার মতো কোম্পানিগুলি বলেছে যে সরবরাহকারী পরিবর্তন এবং তাদের কার্যক্রম সামঞ্জস্য করার সময় এবং প্রক্রিয়া জড়িত থাকার কারণে তারা বেঁচে থাকার মোডে রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ড মার্কিন পণ্যের আমদানি বৃদ্ধি এবং শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কম্বোডিয়ার মতো দেশ, যারা ৪৯% শুল্কের মুখোমুখি, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও পণ্য কেনার সামর্থ্য রাখে না।
"এশিয়ার অর্থনীতিগুলি চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের উপর নির্ভরশীল... তারা প্রায় বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের কেন্দ্রবিন্দুতে। যদি বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বাণিজ্যের ধরণে কোনও পরিবর্তন আসে, তাহলে তারা আরও সমস্যার সম্মুখীন হবে," বলেন ইনসিড বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক পুষণ দত্ত।
ভারতের মতো বৃহৎ অভ্যন্তরীণ চাহিদা সম্পন্ন দেশগুলি বাণিজ্য ধাক্কা থেকে রক্ষা পেতে পারে, তবে সিঙ্গাপুর এবং এমনকি চীনের মতো রপ্তানির উপর বেশি নির্ভরশীল অর্থনীতিগুলি বড় ধাক্কার সম্মুখীন হবে, মিঃ পুষণ দত্ত আরও বলেন।
মিস ভরদ্বাজ মূল্যায়ন করেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার, তিনি আরও যোগ করেছেন: "শুল্ক যতই পরিবর্তিত হোক না কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক এশিয়ান ব্যবসার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহক থাকবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি, একটি গতিশীল ভোক্তা বাজার সহ।"
দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় নির্মাতাদের উপর আঘাত হানার পাশাপাশি, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের শুল্ক আরোপিত হলে এই অঞ্চলে কয়েক দশক ধরে পরিচালিত মার্কিন কোম্পানিগুলির খরচও বৃদ্ধি পাবে। কিছু মার্কিন কোম্পানি বলেছে যে তাদের বর্ধিত খরচ তাদের পণ্যের উপর চাপিয়ে দিতে হবে, যার ফলে গ্রাহকদের দাম বেশি হবে।
বিশেষজ্ঞরা আরও মূল্যায়ন করেন যে বিদেশী বিনিয়োগ লাওস এবং কম্বোডিয়া থেকে ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো কম শুল্কযুক্ত দেশগুলিতে স্থানান্তরিত হতে পারে। ব্যবসাগুলি নতুন গ্রাহকদেরও সন্ধান করতে পারে - সম্ভাব্য বাজার হিসাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), মধ্যপ্রাচ্য এবং ল্যাটিন আমেরিকা।
"আমরা আর বিশ্বব্যাপী নই, আমরা আরও আঞ্চলিক," গ্লোবালফাউন্ড্রিজের মিঃ ট্যান বলেন। "যেখানে আমরা নিরাপদ বোধ করি এবং সরবরাহ বজায় থাকবে সেখানে যান। কিন্তু মানুষকে এই সত্যে অভ্যস্ত হতে হবে যে পণ্যটি আগের মতো সস্তা নয়।"
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনাম চুক্তিটি এখন পর্যন্ত ঘোষিত দ্বিতীয় বাণিজ্য চুক্তি। আরও চুক্তি স্বাক্ষরিত না হওয়া পর্যন্ত, এশিয়ার ব্যবসা এবং অর্থনীতিগুলিকে একটি নতুন পথ বেছে নিতে হতে পারে।
অধ্যাপক দত্ত একটি পুরনো প্রবাদের মাধ্যমে কী ঘটছে তা সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন: "শাসকের কাছে মাথা নত করো, তারপর নিজের পথে চলো।"
সূত্র: https://doanhnghiepvn.vn/doanh-nhan/doanh-nghiep-chau-a-tim-cach-thich-ung-voi-thue-quan-cua-tong-thong-trump/20250708081952972
মন্তব্য (0)